জনস্বাস্থ্য কারিগরী
•   বিগত মে ২০১১ থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগ বাংলার গ্রামীণ জনসাধারণের জন্য বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহের ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনেছে।

•   বর্তমান সরকারের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হল স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় ‘ভিশন ২০২০’ ডকুমেন্ট তৈরি। স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় এর ব্যয় যথাক্রমে ১২৯৫ কোটি এবং ২১,১২৫ কোটি টাকা ধার্য করা হয়েছে।

•   এই সরকার এই প্রথম জঙ্গলমহল অঞ্চলে (পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর) জনগণের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দানের নিদর্শন স্বরূপ, ৫০টি ভূগর্ভস্থ নলবাহিত জল সরবরাহ প্রকল্প বরাদ্দ করেছে যার আনুমানিক ব্যয় ১৪১.৭০ কোটি টাকা এবং উপকৃত হবে ৩.১৪ লক্ষ মানুষ(২০০১ সুমারি)। ৩১ অগাস্ট, ২০১৪ পর্যন্ত এর মধ্যে ৪৭টি প্রকল্প শুরু হয়ে গিয়েছে এবং বাকি ৩টির কাজ শেষ হবে ডিসেম্বর, ২০১৪ এর মধ্যে।

•   বাঁকুড়া জেলার যে অঞ্চল অনুর্বর হিসেবে চিহ্নিত এবং পানীয় জলের অপর্যাপ্ততা রয়েছে, সেই সব এলাকার জন্য শুরু হছে বাকুড়া পর্যায় – ১ জল সরবরাহ প্রকল্প। এই প্রকল্পের জন্য বি আর জি এফ থেকে বরাদ্দ হয়েছে ১০১১.১২ কোটি টাকা যা ১৪টি ব্লকের প্রায় ৩০.১৫ লক্ষ মানুষের কাজে লাগবে। এর মধ্যে ৪৫% কাজ শেষ হয়েছে ২০১৩-১৪ তে। আংশিকভাবে এই প্রকল্পের সুবিধা পাওয়া যাবে মার্চ, ২০১৫ তে।

•   পুরুলিয়া জেলার ব্যাপক অঞ্চলে জল সরবরাহ সুনিশ্চিত করতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে এবং জাপানের জে আই সি এ সংস্থার অর্থানুকুল্যে ১৫.১৪ লক্ষ পুরুলিয়াবাসীকে জল সরবরাহের লক্ষ্যে ১০১৭ কোটি ৯০ লক্ষ টাকার জল সরবরাহ প্রকল্প বরাদ্দ করা হয়েছে, যা খুব তাড়াতাড়ি শুরু হতে চলেছে।

•   নিউটাউন, কলকাতা নবদিগন্ত, বিধাননগর, দক্ষিণ দমদম পুরসভা এবং উত্তর ২৪ পরগনা জেলার আর্সেনিক প্রভাবিত হাড়োয়ার গ্রামাঞ্চল ও রাজারহাট এলাকাসমূহের দীর্ঘদিনের অপরিশোধিত জলের (Raw Water) সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে আনুমানিক ৩৪৮ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকার একটি জল সরবরাহ প্রকল্প গৃহীত হয়েছে।

•   গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে নলবাহিত জল সরবরাহ করার জন্য নতুন এবং পুরোনো জল সরবরাহ প্রকল্প ব্যবহার করা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত ১,১৭,৭৬৭টি বাড়িতে নলবাহিত জল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে (অগাস্ট, ২০১৪)।

•   মে, ২০১১ থেকে অগাস্ট, ২০১৪ পর্যন্ত ৪১২টি নলবাহিত জল প্রকল্প তৈরির জন্য ৬০০৮.৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যাতে করে উপকৃত হবে প্রায় ১,২১,৫৫,৭৯৫ জন মানুষ। এই সময় ৪৪.১২% গ্রামের মানুষ এই পরিষেবা পাবেন, যা আগে ছিল ৩৭.৯৫%। এই সময় ৩১,১৯১টি নতুন স্পট সোর্স তৈরি করা হয়েছে।

•   দক্ষিণ ২৪ পরগণার ফলতা-মথুরাপুর এবং ৯টি পার্শ্ববর্তী ব্লকে লবণাক্ত জলের সমস্যা নিরসনের উদ্দেশ্যে শুরু হয়েছে ভূ-পৃষ্ঠ জলাধার নির্ভর জল সরবরাহ প্রকল্প। এর জন্য বরাদ্দ হয়েছে ১৩৩২.৪১ কোটি টাকা যাতে করে উপকৃত হবে ৩২.৮৯ লক্ষ মানুষ। ১০টি ব্লকের ৯০২টি মৌজায় এই কাজ শুরু হয়েছে। শুরু হয়েছে ইনটেক জেটি ও ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের কাজ।

•   সুবর্ণরেখা নদীর জলকে ব্যবহার করে পাঁশকুড়া-২ ব্লকের জন্য শুরু হয়েছে ভূ-পৃষ্ঠস্থ জলাধার নির্ভর জল সরবরাহ প্রকল্প, যার আনুমানিক ব্যয় প্রায় ২৪১.৭২ কোটি টাকা। ১১২টি মৌজা ও পাঁশকুড়া-২ ব্লকের ১টি সেনসাস টাউন এই প্রকল্পের অন্তর্গত।

•   প্রায় ১৫০.৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বালি-জগাছায় ভূপৃষ্ঠ জলাধার নির্ভর জল সরবরাহ প্রকল্প শুরু হয়েছে। হাওড়া জেলার লবণাক্ত বালি-জগাছা অঞ্চলের চাকাপাড়া, চামরাইল, একসারা, জগদীশপুর ও খালিয়া টাউনগুলির জন্য এই জল সরবরাহ প্রকল্প তৈরি করা হবে যাতে করে উপকৃত হবে প্রায় ২.৮৬ লক্ষ মানুষ।

•   এই বিভাগ নবীকরণ যোগ্য শক্তির উৎসগুলির ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দিচ্ছে। এই উদ্দেশ্যে উত্তর ২৪ পরগণার হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকে শ্রীধরকাটিতে এবং সুন্দরবন দ্বীপের কামাখ্যাপুরে (১০টি গ্রামের ৩৮,১৭৮ জন অধিবাসীকে পরিষেবার আওতায় আনার লক্ষ্যে) ৬৩ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকা আনুমানিক ব্যয়ে ২টি সৌরশক্তিচালিত জল সরবরাহ প্রকল্পের প্রযুক্তিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অধিকন্তু, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও পুরুলিয়া জেলায় আরও ৭০৪টি সৌরশক্তিচালিত দুই পাইপবাহিত জল সরবরাহ প্রকল্পের কাজ ইতিমধ্যে শুরু করা হয়েছে। এর জন্য আনুমানিক ব্যয় ৫১.৬৭ কোটি টাকা।

•   এই বিভাগ বর্তমান ১২০টি জল পরীক্ষার ল্যাবরেটরির মাধ্যমে জলের মান নিরীক্ষণ তথা তদারকির উপর সদা সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে। নিরীক্ষণ তথা তদারকি ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে ১০০টি জলের গুণগত মান পরীক্ষার ল্যাবরেটরি স্থাপনের বিশদ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যার আনুমানিক ব্যয় ৩৭ কোটি টাকা। এই ল্যাবরেটরিগুলি ২০১৪-র মধ্যে কাজ শুরু করবে।

•   পি এইচ ই দপ্তর, বন্যা এবং খরার সময় সক্রীয়ভাবে জল-সংকট মিটিয়ে জল সরবরাহ করে। দপ্তরটির ১৩টি ভ্রাম্যমান ট্রিটমেন্ট ইউনিট আছে যা জরুরি অবস্থায় পানীয় জল সরবরাহ করতে সক্ষম। এই ভ্রাম্যমান ইউনিট গুলি থেকে সঙ্গে সঙ্গেই প্যাকেটে পানীয় জল যোগান দেওয়া সম্ভব। বন্যা বা অন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ আক্রান্ত মানুষের ক্ষেত্রে এই পরিশ্রুত পানীয় জল বিশেষভাবে কাজে লাগে। ২০১৩-১৪-এ প্রায় ৮৯.৬৫ লক্ষ প্যাকেট / বোতল পরিশ্রুত পানীয় জল বিভিন্ন অনুষ্ঠান, মেলা ও জরুরি অবস্থায় বিলি করা হয়েছে।

•   খরা, বন্যার মতো আপৎকালীন অবস্থা মোকাবিলার লক্ষ্যে ও মেলা ইত্যাদি জনসমাবেশে নিরাপদ পানীয় জলের সংস্থান করতে জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগ পানীয় জল বোতলজাত করার জন্য ৮টি কারখানা স্থাপন করছে। এগুলি হবে যথাক্রমে দক্ষিণ ২৪ পরগণা, শিলিগুড়ি, কোচবিহার, মালদা, মুর্শিদাবাদ, পূর্বস্থলী, হরিণঘাটা ও ব্যারাকপুরে। ৪টি কারখানা - দক্ষিণ ২৪ পরগণা, হরিণঘাটা(নদীয়া), পূর্বস্থলী(বর্ধমান) এবং লালবাগ (মুর্শিদাবাদ)-এ উৎপাদন শুরু হয়ে গিয়েছে। অন্য ৪টির উৎপাদন খুব শীঘ্রই শুরু হবে।

•   কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কলকাতায় প্রথম ‘ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ওয়াটার কোয়ালিটি’ গঠন করা হবে। এটি ভারতের মধ্যে প্রথম। এই জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার জোকায় ৮.৭২ একর জমি দিয়েছে এবং প্রাথমিক কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে।

•   এবছর ‘জাতীয় নিরাপদ পানীয় জল ও স্বাস্থ্যবিধান সপ্তাহ’ পালিত হয়েছে ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ পর্যন্ত। এই প্রচার অভিযানের মূল লক্ষ্যই হল রাজ্যের প্রত্যেকটি ঘরে পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহ ও শৌচাগারের ব্যবস্থা করা। রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন বিভাগ এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের যৌথ প্রয়াসে রাজ্যজুড়ে এই বিপুল প্রচার চালানো হচ্ছে জনসাধারণের সচেতনতার উদ্দেশ্যে।

•   রূপায়ণমুখী প্রকল্পসমূহ

•   ২০১৪-১৫-এ বাঁকুড়ায় জল সরবরাহ প্রকল্প পর্যায়-২-এর অধীনে ৮টি ব্লকে যথা মেজিয়া, গঙ্গাজলঘাটি, ইঁদপুর, তালডাঙরা, জয়পুর, কোতুলপুর, পাত্রসায়র এবং সোনামুখীতে বি আর জি এফ প্রকল্পের আওতায় ৬৯০.৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে।

•   শিলিগুড়ি পৌর নিগম জল সরবরাহ প্রকল্প চালু করা হবে এবং বিস্তার পথে গ্রামাঞ্চলগুলিকে পরিষেবার আওতায় আনা হবে। এর জন্য খরচ হবে আনুমানিক ৩০৩.৯২ কোটি টাকা।

•   রাজ্যের লবণাক্ত জলের অঞ্চলগুলির জনসাধারণকে সুপেয় জল পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই বিভাগ দীঘায় ১৫ এমএলডি ক্ষমতাবিশিষ্ট লবণাক্তনাশক কারখানা স্থাপনের প্রয়াস নিয়েছে। এর ফলে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রামনগর-১ ও ২ ব্লকের ১৫৬টি মৌজার ২.১৮ লক্ষ মানুষকে প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা যাবে। এর জন্য আনুমানিক ব্যয় হবে ২২৫.৬৪ কোটি টাকা । উত্তর ২৪ পরগণার বসিরহাটে আরেকটি ১০ এমএলডি ক্ষমতাবিশিষ্ট লবণাক্তনাশক কারখানা তৈরি হবে। উপকৃত হবেন বসিরহাট-১ ব্লকের ২২টি মৌজার ১.২৩ লক্ষ মানুষ। খরচ হবে আনুমানিক ১৯৪.৯৭ কোটি টাকা। ইহা ফলপ্রসূ হলে রাজ্যের অন্যান্য জায়গাতেও এই ধরণের কারখানা স্থাপন করা হবে।

•   ৭টি জেলার (বীরভূম, বাঁকুড়া, দক্ষিণ ও উত্তর দিনাজপুর, পুরুলিয়া, মালদা ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা) ৪৩টি ব্লকে পর্যায়ক্রমে ফ্লোরাইড দূরীকরণের জন্য আনুমানিক ১৫৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে।

•   উত্তর ২৪ পরগণার আর্সেনিক অধ্যুষিত হাবড়া-গাইঘাটা এলাকায় ভূ-পৃষ্ঠ নলবাহিত জল সরবরাহ প্রকল্পের জন্যে বরাদ্দ হয়েছে ৫৭৮.৯৪ কোটি টাকা। উপকৃত হবে ৩২৭টি মৌজার ১৮.০৪ লক্ষ মানুষ।

•   ফ্লোরাইড সংক্রমণ থেকে মুক্তি পেতে দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর ব্লকে একটি উপ ভূ-পৃষ্ঠ জলাধার নির্ভর নলবাহিত জল সরবরাহ প্রকল্প শুরু হচ্ছে। এর জন্য বরাদ্দ হয়েছে ১৮২.১৯ কোটি টাকা। উপকৃত হবে ২০৩ মৌজার প্রায় ২.০৭ লক্ষ মানুষ।

•   ফ্লোরাইড সংক্রমণ থেকে মুক্তি পেতে দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন ব্লকে একটি উপ ভূ-পৃষ্ঠ জলাধার নির্ভর নলবাহিত জল সরবরাহ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ১৬৫.৫ কোটি টাকা। উপকৃত হবে ২৭৯ মৌজার প্রায় ৩.২১ লক্ষ মানুষ।